ইসলাম ধর্মে যেসমস্ত বিষয়াদি অত্যন্ত কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছে তার মধ্যে সুদ অন্যতম। সুদকে আরবিতে রিবা বলা হয়। এর অর্থ অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় মূল সম্পদের এক জাতীয় কিছু হাতে হাতে লেনদেন করে সময়কে উপলক্ষ করে কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করা। প্রদেয় কিছু ঋন হিসেবে গ্রহণের সময় মূলের অতিরিক্ত নেওয়াকে সুদ বলা হয়।
আল্লাহতায়ালা সুদ নিষিদ্ধ করে বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।রাসুল(সা:) বলেন,যার গোশত সুদের দ্বারা বর্ধিত হলো তার জন্য জাহান্নাম ই হলো যথাযথ বাসস্থল।
সুদ প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সূদের যে অংশ বাকী আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও। যদি তোমরা তা না করো তাহ’লে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হ’তে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখ(বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯) ।
সুদের লেনদেন ও সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কঠোর ও সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, যারা সূদ খায়, সূদ দেয়, সূদের হিসাব লেখে এবং সূদের সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহ (সা:) তাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং অপরাধের ক্ষেত্রে এরা সকলেই সমান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭) । সুদ অত্যন্ত জঘন্যতম পাপ।সূদের পাপের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘সূদের (পাপের) সত্তুরটি স্তর রয়েছে। যার নিম্নতম স্তর হ’ল মায়ের সাথে যেনা করার পাপ’ (ইবনু মাজাহ, হা/২২৭৪, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮২৬) ।
সুদের বিষয়ে কমবেশির কোন তারতম্য নেই।সুদের সাথে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র সংশ্লিষ্ট থাকা ও মহাপাপ।এবিষয়ে বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) রিবা বা সুদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশ বার ব্যভিচার করার চেয়েও অনেক বেশী হয়’ (আহমাদ, মিশকাত হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ)।
আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হ’ল নিঃস্বতা’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭, সনদ ছহীহ) । উক্ত হাদীস সমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় সুদ ইসলামে সম্পুর্ণরূপে হারাম এবং এর শেষ পরিণতি চিরস্থায়ী জাহান্নাম । তাই কম হোক বেশী হোক সকল প্রকার সূদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা একান্ত যরূরী।
সুদ সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে।সুদ গরিবকে আরো গরিব করে দেয়।সুদ অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে।সুদ নিকৃষ্টতম হারাম।সুদের অভিশাপে চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। তাই আসুন, সুদের মতো জঘন্যতম অপরাধ পরিহার করে আল্লাহতায়ালার নিকট তাওবা করে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাচাতে সচেষ্ট হই।
লেখকঃ মুফতী মোহাম্মদ এনামুল।, যুগ্ম সম্পাদকঃ ইসলামী ঐক্যজোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
Leave a Reply